ফিচার

প্রশান্ত মহাসাগরের রহস্যময় গর্ত নিয়ে যা জানা গেল
প্রশান্ত মহাসাগরের রহস্যময় গর্ত নিয়ে যা জানা গেল

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন অঙ্গরাজ্যের উপকূলে একটি রহস্যময় স্থান আছে, যেখানে প্রতিটি ঢেউ আসে বিস্ময় আর রোমাঞ্চের সঙ্গে। প্রশান্ত মহাসাগরের শক্তিশালী ঢেউ গর্তে এসে আছড়ে পড়ে, তারপর ঘূর্ণির মতো নিচে নামতে থাকে, যেন সমুদ্রের পানি তলহীন এক গর্তে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই প্রাকৃতিক আশ্চর্যজনক স্থানের নাম থর’স ওয়েল।   কেপ পারপেটুয়ার আগ্নেয়শিলা–ঘেরা উপকূলে দাঁড়িয়ে দেখলে মনে হয়, এটি পৃথিবীর গভীরতম নরক–দরজা। কেউ একে ‘সিংকহোল’, কেউ ‘গেট অব হেল’ বলেও অভিহিত করেন। প্রশান্ত মহাসাগরের ‘ড্রেন পাইপ’ নামেও পরিচিত এই গর্ত। কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে, এর রহস্যের পেছনে আছে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রাকৃতিক গল্প। দীর্ঘদিন ধরে থর’স ওয়েলকে একটি বিশাল সিংকহোল মনে করা হলেও গবেষণায় জানা গেছে, এটি কেপ পারপেটুয়ার আগ্নেয় তাপে সৃষ্ট ব্যাসাল্ট শিলার ওপর সমুদ্রের ঢেউয়ের প্রভাবেই তৈরি। হাজার বছর ধরে ঢেউ শিলায় আঘাত করে একটি বড় সাগর–গুহা তৈরি করেছে, যার ছাদ ধসে পড়ার ফলে বর্তমান গোলাকার খোলা গর্তটি সৃষ্টি হয়েছে।   চোখে যত গভীর দেখায়, বাস্তবে এর গভীরতা মাত্র ২০ ফুট। শিলার নিচে ছোট ছোট চ্যানেল রয়েছে, যেখান দিয়ে পানি প্রবেশ ও নির্গমন করে। এ কারণে মনে হয়, বিশাল পরিমাণ পানি যেন কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে।   থর’স ওয়েলের সবচেয়ে নাটকীয় দৃশ্য দেখা যায় জোয়ারের সময়। ঢেউ জোরে গর্তে ঢুকলে পানি উল্টো দিক দিয়ে হঠাৎ উপরে উঠে আসে, যেন একটি উষ্ণ প্রস্রবণ (গেইজার)। কখনো কখনো ৪০ ফুট পর্যন্ত পানি উপরে উঠে যায়। এই দৃশ্য একদিকে রোমাঞ্চকর, অন্যদিকে ভয়ংকর—কারণ পাথর পিচ্ছিল এবং ‘স্নিকার ওয়েভ’ মানুষকে টেনে নিতে পারে। স্থানীয়দের সতর্কবার্তা, থর’স ওয়েলের খুব কাছে গেলে এটি আপনাকেও গ্রাস করতে পারে।   অবস্থান ও দর্শন সময়: অবস্থান: কেপ পারপেটুয়া, অরিগন, যুক্তরাষ্ট্র। হাইওয়ে ১০১-এর ঠিক পাশে। সেরা সময়: জোয়ারের এক ঘণ্টা আগে—পানি ওঠা-নামার দৃশ্য সবচেয়ে স্পষ্ট। এড়িয়ে চলবেন: জোয়ারের সময়, ঝড়ো আবহাওয়া বা উচ্চ ঢেউ চলাকালে। থর’স ওয়েলের নাম নর্স পুরাণের বজ্রদেব থর থেকে এসেছে। কিংবদন্তি বলে, থর বজ্রাঘাতে শিলা ফাটিয়ে গর্ত তৈরি করেছিলেন। যদিও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করছেন, এটি সম্পূর্ণই একটি গুহার ছাদ ধসে যাওয়ার ফল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমুদ্রস্তর ও আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ঢেউ আরও তীব্র হয়েছে। ২০২৪–২৫ সালের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পানি ‘ফুটন্ত’ প্রভাব আগের চেয়ে নাটকীয়।   থর’স ওয়েল প্রকৃতির এক প্রাকৃতিক নাটক। জোয়ারে উত্তাল, ভাটায় শান্ত। এটি শুধু একটি গর্ত নয়, এটি সময়, শিলা ও সমুদ্রের মিলে তৈরি এক বিস্ময়কর প্রাকৃতিক শিল্পকর্ম।

ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫ 0
দেশে ঘন ঘন ভূমিকম্প, ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কা
দেশে ঘন ঘন ভূমিকম্প, ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কা

রাজধানী ঢাকায় গত একদিনের ব্যবধানে পরপর ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় জনজীবনে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে যে কম্পন অনুভূত হয়েছে, তা শুক্রবারের তীব্র ভূমিকম্পের ঠিক একদিন পর। ভূ-বিশেষজ্ঞরা এটিকে ‘অশনিসংকেত’ হিসেবে দেখছেন।   বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এত কম সময়ের মধ্যে পুনরায় ভূমিকম্প অনুভূত হওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, ভূ-অভ্যন্তরে জমে থাকা চাপ দ্রুত মুক্তি পাচ্ছে। ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ, অপরিকল্পিত নগরের জন্য এটি গুরুতর ঝুঁকির কারণ হতে পারে।   ঢাকা শহর তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছে অবস্থিত হওয়ায় আগ থেকেই ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, পুরানো ও দুর্বল নির্মাণ, এবং দুর্বল উদ্ধার ব্যবস্থা শহরটিকে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ মেগাসিটি হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।   ভূ-বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই পুনঃকম্পনগুলো বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারে, যা ঢাকার ভঙ্গুর অবকাঠামোর জন্য এক বিশাল বিপদের ইঙ্গিত।   তাদের মতে, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। যাতে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় এবং ভবিষ্যতে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।   ঢাকা এখন এক গম্ভীর প্রাকৃতিক সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে, যার মোকাবিলায় জরুরি প্রস্তুতি অপরিহার্য।

নভেম্বর ২৩, ২০২৫ 0
স্বর্ণযুগ থেকে আধুনিক বিজ্ঞানে মুসলিমদের যত অবদান
স্বর্ণযুগ থেকে আধুনিক বিজ্ঞানে মুসলিমদের যত অবদান

মানব সভ্যতার বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে মুসলমান বিজ্ঞানীদের অবদান যুগান্তকারী। কোরআনের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে তারা বিজ্ঞান, চিকিৎসা, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও সমরকৌশলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন।   ফরাসি চিকিৎসাবিদ ড. মরিস বুকাইলি উল্লেখ করেন, ‘কোরআনে এমন কোনো বক্তব্য নেই, যা আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা খণ্ডনযোগ্য।’ এই প্রেরণাই মুসলিম বিজ্ঞানীদের বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের মূল শক্তি হিসেবে কাজ করে।   রসায়নে জাবির ইবনে হাইয়ান ‘রসায়নের জনক’ হিসেবে পরিচিত। তিনি রাসায়নিক বিক্রিয়া ও গলন, স্ফুটন প্রক্রিয়ার ব্যবহার শুরু করেন। পদার্থবিজ্ঞানে ইবনে হাইসাম আলোর প্রতিসরণ ও প্রতিফলনের সঠিক ব্যাখ্যা দেন এবং ক্যামেরা অবস্কিউরার ধারণা প্রবর্তন করেন।   চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইবনে সিনার ‘আল-কানুন ফি আত-তিব্ব’ গ্রন্থ শতাব্দী ধরে ইউরোপে পাঠ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। আবুল কাসেম আজ-জাহরাবি সার্জারি উদ্ভাবন করেন এবং ইবনে নাফিস রক্ত সঞ্চালনের ধারণা প্রদান করেন।   মুসলিমরা সমরকৌশল ও জ্যোতির্বিজ্ঞানেও অগ্রণী ছিলেন। নবী করিম (সা.) যুদ্ধ কৌশল প্রবর্তন করেন, এবং খোলাফায়ে রাশেদার যুগে স্থায়ী সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী গঠন হয়। আল-ফারাবি ও আল-খারেজমি জ্যোতির্বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন।   গণিতে আল-খারেজমির ‘আল-জাবর ওয়াল মুকাবিলা’ গ্রন্থ থেকে অ্যালজেবরা শব্দের জন্ম এবং শূন্য ধারণা প্রবর্তন হয়। আবুল ওয়াফা ও ওমর খৈয়াম গণিতে গুরুত্বপূর্ণ সমাধান প্রদান করেন।   বাগদাদের ‘বাইতুল হিকমা’ বা হাউস অব উইজডমে অনুবাদ আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলিম বিজ্ঞানীরা ইউরোপে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দেন। এই স্বর্ণযুগ প্রমাণ করে, কোরআনের আহ্বানে মানুষ জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত হলে মানবসভ্যতা তার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়। মুসলিম বিজ্ঞানীদের অর্জন আজও বিজ্ঞান ও শিক্ষার প্রতিটি শাখায় অনুপ্রেরণা হিসেবে রয়ে গেছে।

অক্টোবর ২৮, ২০২৫ 0
‘ডিম থেরাপি’ নামে কি সত্যি কিছু আছে?
‘ডিম থেরাপি’ নামে কি সত্যি কিছু আছে?

ডিম থেরাপি: রোগ সারায়, নাকি কেবল কুসংস্কার? মানুষের জীবনে রোগ, কষ্ট কিংবা দুর্ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করার ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। যখন আধুনিক চিকিৎসা ছিল না, তখন মানুষ ভরসা রাখত প্রকৃতির উপাদান, আচার-অনুষ্ঠান ও বিশ্বাসের ওপর। এই বিশ্বাসের ভাণ্ডারে ডিমও জায়গা করে নেয়—যার ওপর গড়ে ওঠে রহস্যময় এক প্রথা, ‘ডিম থেরাপি’।   কিন্তু প্রশ্ন হলো—আসলেই কি ডিম দিয়ে রোগ সারে? নাকি এটি কেবল লোকবিশ্বাসের অংশ?   লোকজ বিশ্বাসে ডিম থেরাপির ব্যবহার বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু গ্রামাঞ্চলে এখনো দেখা যায়—কোনো শিশু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা ‘নজর’ লেগেছে মনে হলে তার মাথার চারপাশে কাঁচা ডিম ঘুরিয়ে পরে ভেঙে দেখা হয়। বিশ্বাস করা হয়, খারাপ শক্তি বা দৃষ্টিদোষ ডিমের ভেতরে চলে যায়। শুধু আমাদের দেশেই নয়—মেক্সিকো, পেরু, কিউবা ও ফিলিপাইনের মতো লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতেও এই প্রথা প্রচলিত। সেখানে ‘লিম্পিয়া (Limpia)’ নামে পরিচিত এক আচার রয়েছে, যেখানে কাঁচা ডিম দিয়ে শরীর মুছে পরে সেটি পানিতে ভেঙে রাখা হয়। ডিমের ভেতরের আকৃতি দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়—কোথায় সমস্যা, কার কারণে অসুস্থতা ইত্যাদি।   অনেক সংস্কৃতিতে ডিমকে “জীবনের প্রতীক” ধরা হয়। তাই ডিম দিয়ে শরীর শুদ্ধ করা মানে নেগেটিভ এনার্জি দূর করা—এমনটাই বিশ্বাস।   ইতিহাসে ডিম থেরাপির অবস্থান ডিমকে ঘিরে নানা বিশ্বাসের ইতিহাস বহু পুরোনো। প্রাচীন মিশর ও গ্রিসে ডিম ছিল উর্বরতা ও নতুন জীবনের প্রতীক। আবার মধ্যযুগের ইউরোপে অনেক সম্প্রদায় রোগ বা অশুভ আত্মা তাড়াতে ডিম ব্যবহার করত। ভারতীয় উপমহাদেশেও লোকজ চিকিৎসায় ডিমের ব্যবহার ছিল সাধারণ। গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করত—ডিম দিয়ে শরীরের খারাপ শক্তি বা অসুখ দূর করা সম্ভব।   আধুনিক বিজ্ঞান কী বলে? বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট বলেছেন—ডিম থেরাপি কোনো বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নয়। ডিম ঘুরিয়ে অসুখ সারানো বা ডিম ভেঙে রোগ নির্ণয়ের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বরং, কাঁচা ডিম ব্যবহারের ফলে স্যালমোনেলা জাতীয় জীবাণুর ঝুঁকি বাড়ে, যা শিশু ও বয়স্কদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে ডিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। এটি প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলের সমৃদ্ধ উৎস। নিয়মিত ডিম খেলে শরীর ভালো থাকে। চুল বা ত্বকের যত্নে ডিমের ব্যবহারও উপকারী, কিন্তু এসব ‘থেরাপি’ নয়—এগুলো পুষ্টি ও সৌন্দর্যচর্চার অংশ মাত্র।   কুসংস্কার, না সংস্কৃতির অংশ? যে কোনো সমাজের বিশ্বাসে লুকিয়ে থাকে ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতিফলন। ডিম থেরাপিও তার ব্যতিক্রম নয়। যদিও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এটিকে স্বীকৃতি দেয় না, তবুও এই প্রাচীন লোকাচার আজও মানুষের ভরসা জাগায়। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, এ ধরনের প্রথা শারীরিক চিকিৎসা না হলেও মানসিক স্বস্তি দেয়। অসুস্থ অবস্থায় এমন রীতি মানসিক ভরসা তৈরি করে, যা রোগীর মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে।   ডিম থেরাপি বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নয়, এটা সত্যি। কিন্তু এটি লোকবিশ্বাস, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের এক জীবন্ত অংশ। হয়তো আজ এটি চিকিৎসার বিকল্প নয়, তবে মানুষের বিশ্বাস ও মানসিক প্রশান্তির প্রতীক হিসেবে এর স্থান এখনো অটুট।

অক্টোবর ১৪, ২০২৫ 0
ইতিহাসের হারানো শহরগুলো
ইতিহাসের হারানো শহরগুলো: হাজার বছর পরও যেগুলোর রহস্য উন্মোচন হয়নি!

ইতিহাসের হারানো শহর: শতাব্দী পেরিয়েও যেগুলোর রহস্য উন্মোচিত হয়নি সভ্যতার ইতিহাস আসলে মানুষের উত্থান-পতনের ইতিহাস। প্রাচীন যুগে শিল্প, স্থাপত্য আর জ্ঞানের উৎকর্ষে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য মহিমান্বিত নগরী। কিন্তু সময়ের প্রবল স্রোতে কিছু শহর মাটির নিচে চাপা পড়েছে, কিছু হারিয়ে গেছে দিগন্তের ওপারে। আজও সেই শহরগুলোর ধ্বংসাবশেষ দাঁড়িয়ে আছে নীরব সাক্ষীর মতো—যেন অতীতের কোনো অমীমাংসিত গল্প বলছে।   ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা শত প্রচেষ্টায় খুঁজে চলেছেন উত্তর, কিন্তু এখনও অনেক প্রশ্নের জট অমীমাংসিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমনই কিছু হারানো শহরের গল্প, যেগুলো আজও রহস্যে ঘেরা— আটলান্টিস: কিংবদন্তির শহর, নাকি কেবল কল্পনা? প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো প্রথম লিখেছিলেন আটলান্টিস নিয়ে। তার বর্ণনায় এটি ছিল এক প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ, স্থাপত্যে অনন্য নগররাষ্ট্র। কিন্তু হঠাৎই কোনো ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে শহরটি তলিয়ে যায় সমুদ্রগর্ভে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ এই হারানো শহরের সন্ধানে ঘুরছে। কেউ বলেন, এটি ছিল ভূমধ্যসাগরে; কেউ আবার মনে করেন আটলান্টিক বা ক্যারিবীয় অঞ্চলে। আধুনিক প্রযুক্তি ও স্যাটেলাইট বিশ্লেষণেও মিলেনি নিশ্চিত প্রমাণ। প্রশ্ন থেকেই যায়—আটলান্টিস কি বাস্তব, নাকি প্লেটোর কল্পনা মাত্র? মাচু পিচু: পাহাড়চূড়ায় লুকানো ইনকার বিস্ময় পেরুর আন্দিজ পর্বতের উচ্চতায় দাঁড়িয়ে থাকা মাচু পিচু ইনকা সাম্রাজ্যের সবচেয়ে রহস্যময় শহর। ১৫শ শতকে নির্মিত হলেও, এটি আবিষ্কৃত হয় ২০শ শতকের শুরুতে। পাহাড়ের চূড়ায় এত নিখুঁত স্থাপত্য তৈরি সম্ভব কীভাবে—এই প্রশ্ন আজও গবেষকদের ভাবায়। কেউ বলেন, এটি ছিল রাজাদের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ; আবার কেউ মনে করেন ধর্মীয় কেন্দ্র বা জ্যোতির্বিদ্যা গবেষণার স্থান। এত উচ্চতায় পানি সরবরাহ ও কৃষি ব্যবস্থা কীভাবে চলত, সেটাও আজো এক রহস্য। মোহনজো-দারো: প্রাচীন সভ্যতার নীরব সাক্ষী পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে অবস্থিত মোহনজো-দারো ছিল সিন্ধু সভ্যতার এক অনন্য নগর। প্রায় ৪,৫০০ বছর আগে এখানে গড়ে উঠেছিল পরিকল্পিত নগরায়ণ, উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও স্নানাগার—যা আধুনিক সভ্যতাকেও অবাক করে। তবুও হঠাৎ করেই শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়। ধারণা করা হয়, কোনো ভয়াবহ বন্যা, ভূমিকম্প বা আক্রমণের কারণে মানুষ শহর ছেড়ে চলে যায়। শহর জুড়ে পাওয়া মানব কঙ্কালগুলো বলে যায়—ধ্বংসটা হয়েছিল আচমকা, আর কারণটা আজও অজানা। পম্পেই: মুহূর্তের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া রোমান নগরী খ্রিস্টাব্দ ৭৯ সালে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ইতালির পম্পেই শহর ছাইয়ের নিচে চাপা পড়ে মুহূর্তেই হারিয়ে যায় ইতিহাস থেকে। আজও খননকাজে সেই সময়ের ঘরবাড়ি, দেয়ালচিত্র আর মানুষের দেহ প্রায় অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই নিদর্শনগুলো থেকে আমরা জানতে পারি রোমানদের জীবনযাত্রা কেমন ছিল। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—কেন তারা আগ্নেয়গিরির পাদদেশে থেকেই যাচ্ছিল, যখন বিপদের আভাস স্পষ্ট ছিল? অ্যাঙ্কর ওয়াট: জঙ্গলের বুকের মহিমান্বিত নগর কম্বোডিয়ার জঙ্গলে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাঙ্কর ওয়াট শুধু একটি মন্দির নয়, বরং এক বিশাল সাম্রাজ্যের প্রতীক। খেমার রাজ্যের শাসনামলে এটি ছিল বিশ্বের বৃহত্তম নগরকেন্দ্র। ১৫শ শতকে হঠাৎ করেই নগরটি পতনের পথে যায়। কেউ বলেন জলবায়ু পরিবর্তন ও খরার কারণে কৃষি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, কেউ আবার আক্রমণকারীদের হাতে ধ্বংসের কথা বলেন। আজও অ্যাঙ্কর ওয়াট দাঁড়িয়ে আছে মহিমায়—কিন্তু এর পতনের আসল কারণ এখনো রহস্যের আড়ালে। ট্রয়: কল্পকাহিনি নাকি বাস্তবের যুদ্ধক্ষেত্র? গ্রিক কবি হোমার তাঁর মহাকাব্য ইলিয়াড-এ লিখেছিলেন ট্রয় নগরের কথা—যেখানে হয়েছিল বিখ্যাত ট্রোজান যুদ্ধ। বহু শতাব্দী ধরে মানুষ ভেবেছিল, ট্রয় কেবল একটি কাহিনি। কিন্তু ১৯শ শতকে প্রত্নতত্ত্ববিদ হাইনরিখ শ্লিমান আধুনিক তুরস্কে খুঁজে পান ট্রয়ের ধ্বংসাবশেষ। তবুও রহস্য রয়ে যায়—যুদ্ধ কি সত্যিই হয়েছিল, নাকি এটি কেবল গল্প? শহরের পতনের কারণ আজও এক ধোঁয়াশা।   এই হারানো শহরগুলো আজও আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মানবসভ্যতা যতই এগিয়ে যাক, সময়ের সামনে আমরা এখনো ক্ষুদ্র। ইতিহাসের বুকের গভীরে হয়তো এখনো ঘুমিয়ে আছে আরও অজানা নগর, যাদের রহস্য একদিন হয়তো উন্মোচিত হবে… আবার হয়তো কখনোই নয়।

অক্টোবর ১৪, ২০২৫ 0
Popular post
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে চাকরির সুযোগ, বেতন ৪৫ হাজার

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (BDRCS) নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট অফিসার পদে জনবল নিয়োগ দেবে। আগ্রহী প্রার্থীরা আগামী ১৬ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।   এক নজরে নিয়োগের বিস্তারিত   প্রতিষ্ঠানের নাম: বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (BDRCS) বিভাগের নাম: অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন পদের নাম: অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট অফিসার পদসংখ্যা: ০১ জন শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্নাতক বা সমমান অভিজ্ঞতা: ন্যূনতম ১ বছর চাকরির ধরন: চুক্তিভিত্তিক প্রার্থীর ধরন: নারী-পুরুষ উভয় বয়সসীমা: নির্ধারিত নয় বেতন: ৪৫,০০০ টাকা কর্মস্থল: ঢাকা   আবেদন প্রক্রিয়া: আগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে ও আবেদন করতে এখানে ক্লিক করুন। আবেদনের শেষ তারিখ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫

বৃত্তি পাবেন ৮০০ শিক্ষার্থী, আবেদন করবেন যেভাবে

দেশের মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় সহায়তা করতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে ‘স্পন্দনবি’। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে অধ্যয়নরত স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ইমদাদ সিতারা খান ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এবারও বৃত্তি প্রদান করবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।   ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিষয়ে পড়ুয়া প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী এই বৃত্তির সুযোগ পাবেন। আগ্রহীরা আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে ডাক, কুরিয়ার বা সরাসরি উপস্থিত হয়ে আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন।   বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।   কারা আবেদন করতে পারবেন? বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের এইচএসসি উত্তীর্ণ এবং বর্তমানে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত নিম্নোক্ত বিষয়ের মেধাবী, আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন— বিএসসি অনার্স বিএসসি অনার্স (কৃষি, পশুপালনসহ সব অনুষদ) এমবিবিএস বিডিএস বিএসসি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং বিএ অনার্স বিএসএস অনার্স বিবিএ আবেদনপত্র সংগ্রহ আবেদনকারীরা নিচের যেকোনো মাধ্যমে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন— 🔗 https://spaandanb.org/projects/imdad-sitara-khan-scholarship/ 🔗 https://www.facebook.com/share/g/1FXJc2NhHe   অথবা ই-মেইলে যোগাযোগ করেও ফর্ম সংগ্রহ করা যাবে— mostafiz14@yahoo.com rajib.bd@spaandanb.org tuhin.bd@spaandanb.org sajedul1233@gmail.com zabbarbd5493@gmail.com আবেদন পাঠানোর ঠিকানা   স্পন্দনবি বাংলাদেশ অফিস বাসা-৭/২, শ্যামলছায়া-১, ফ্ল্যাট-বি/২, গার্ডেন স্ট্রিট, রিং রোড, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।   যোগাযোগ বৃত্তি সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য অফিস সময়ে যোগাযোগ— ☎️ ০২-৪৮১১৪৪৯৯ 📱 ০১৭১৩-০৩৬৩৬০ 📱 ০১৭৭৩-৬১০০০৯ 📱 ০১৯৩৩-৫৬০৬৬৫ 📱 ০১৭৯৬-১০২৭০০

নানান সুবিধাসহ আড়ংয়ে চাকরির সুযোগ

পোশাক প্রস্তুতকারক ও বিপণন প্রতিষ্ঠান আড়ং নতুন কিছু পদে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আগ্রহী প্রার্থীরা আগামী ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।   পদের বিবরণ: পদের নাম: অ্যাসিস্ট্যান্ট বিভাগ: হেলথ সিকিউরিটি স্কিম (HSS), সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড প্রোডিউসার ডেভেলপমেন্ট (SCPD) পদসংখ্যা: নির্ধারিত নয় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা: শিক্ষাগত যোগ্যতা: যেকোনো বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অন্য যোগ্যতা: এমএস এক্সেল এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে দক্ষতা ডকুমেন্টেশন ও ফাইল ব্যবস্থাপনায় পারদর্শিতা অভিজ্ঞতা: কমপক্ষে ১–২ বছর চাকরির ধরণ ও অন্যান্য তথ্য: চাকরির ধরন: ফুলটাইম কর্মক্ষেত্র: অফিসে প্রার্থীর ধরন: নারী-পুরুষ উভয়ই আবেদন করতে পারবেন বয়সসীমা: উল্লেখ নেই কর্মস্থল: ময়মনসিংহ (ত্রিশাল) বেতন: আলোচনা সাপেক্ষে অন্যান্য সুবিধা: প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, উৎসব বোনাস, স্বাস্থ্য ও জীবন বিমা এবং প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুযায়ী অন্যান্য সুবিধা আবেদন করার নিয়ম:   আগ্রহী প্রার্থীরা এখানে ক্লিক করে আবেদন করতে পারেন।

৫০ হাজার টাকা বেতনে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে চাকরির সুযোগ

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে ‘টেকনিক্যাল অফিসার’ পদে নিয়োগ   দেশের অন্যতম মানবিক সংগঠন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রকল্প কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘টেকনিক্যাল অফিসার’ পদে একজন যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দেবে। আগ্রহীরা ২১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।   পদসংক্রান্ত তথ্য   প্রতিষ্ঠানের নাম: বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পদের নাম: টেকনিক্যাল অফিসার পদসংখ্যা: ১ জন   যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা শিক্ষাগত যোগ্যতা: বিএসসি বা ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অভিজ্ঞতা: ন্যূনতম ২ বছর বয়সসীমা: সর্বোচ্চ ৪০ বছর   বেতন ও চাকরির ধরন বেতন: ৫০,০০০ টাকা চাকরির ধরন: চুক্তিভিত্তিক প্রার্থীর ধরন: নারী-পুরুষ উভয়ই আবেদন করতে পারবেন কর্মস্থল: কুড়িগ্রাম   আবেদন প্রক্রিয়া   আগ্রহীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে ও আবেদন করতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ওয়েবসাইটে ক্লিক করুন।

অভিজ্ঞতা ছাড়াই ১০০ জনকে নিয়োগ দেবে যমুনা গ্রুপ

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান যমুনা গ্রুপ নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্লাজা সেলস বিভাগে ‘এক্সিকিউটিভ’ পদে ১০০ জন যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দেবে। আগ্রহীরা ৮ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।   পদসংক্রান্ত তথ্য   প্রতিষ্ঠানের নাম: যমুনা গ্রুপ বিভাগ: প্লাজা সেলস পদের নাম: এক্সিকিউটিভ পদসংখ্যা: ১০০টি   যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা   প্রার্থীকে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারী হতে হবে। এ পদে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন নেই, তাই নবীন প্রার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন।   অন্যান্য তথ্য চাকরির ধরন: ফুল-টাইম বেতন: আলোচনা সাপেক্ষে প্রার্থীর ধরন: নারী ও পুরুষ উভয়ই আবেদন করতে পারবেন বয়সসীমা: ন্যূনতম ২২ বছর কর্মস্থল: দেশের যেকোনো স্থানে আবেদন সংক্রান্ত তথ্য   আগ্রহীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে ও আবেদন করতে এখানে ক্লিক করুন। আবেদনের শেষ সময়: ৮ নভেম্বর ২০২৫।

Top week

নেসকোতে বড় নিয়োগ, পদ ১৩৭
চাকরি

নেসকোতে বড় নিয়োগ, পদ ১৩৭

ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫ 0