ফিচার

‘ডিম থেরাপি’ নামে কি সত্যি কিছু আছে?

অক্টোবর ১৪, ২০২৫ 0
‘ডিম থেরাপি’ নামে কি সত্যি কিছু আছে?
‘ডিম থেরাপি’ নামে কি সত্যি কিছু আছে?

ডিম থেরাপি: রোগ সারায়, নাকি কেবল কুসংস্কার?

মানুষের জীবনে রোগ, কষ্ট কিংবা দুর্ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করার ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। যখন আধুনিক চিকিৎসা ছিল না, তখন মানুষ ভরসা রাখত প্রকৃতির উপাদান, আচার-অনুষ্ঠান ও বিশ্বাসের ওপর। এই বিশ্বাসের ভাণ্ডারে ডিমও জায়গা করে নেয়—যার ওপর গড়ে ওঠে রহস্যময় এক প্রথা, ‘ডিম থেরাপি’।

 

কিন্তু প্রশ্ন হলো—আসলেই কি ডিম দিয়ে রোগ সারে? নাকি এটি কেবল লোকবিশ্বাসের অংশ?

 

লোকজ বিশ্বাসে ডিম থেরাপির ব্যবহার

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু গ্রামাঞ্চলে এখনো দেখা যায়—কোনো শিশু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা ‘নজর’ লেগেছে মনে হলে তার মাথার চারপাশে কাঁচা ডিম ঘুরিয়ে পরে ভেঙে দেখা হয়। বিশ্বাস করা হয়, খারাপ শক্তি বা দৃষ্টিদোষ ডিমের ভেতরে চলে যায়।

শুধু আমাদের দেশেই নয়—মেক্সিকো, পেরু, কিউবা ও ফিলিপাইনের মতো লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতেও এই প্রথা প্রচলিত। সেখানে ‘লিম্পিয়া (Limpia)’ নামে পরিচিত এক আচার রয়েছে, যেখানে কাঁচা ডিম দিয়ে শরীর মুছে পরে সেটি পানিতে ভেঙে রাখা হয়। ডিমের ভেতরের আকৃতি দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়—কোথায় সমস্যা, কার কারণে অসুস্থতা ইত্যাদি।

 

অনেক সংস্কৃতিতে ডিমকে “জীবনের প্রতীক” ধরা হয়। তাই ডিম দিয়ে শরীর শুদ্ধ করা মানে নেগেটিভ এনার্জি দূর করা—এমনটাই বিশ্বাস।

 

ইতিহাসে ডিম থেরাপির অবস্থান

ডিমকে ঘিরে নানা বিশ্বাসের ইতিহাস বহু পুরোনো। প্রাচীন মিশর ও গ্রিসে ডিম ছিল উর্বরতা ও নতুন জীবনের প্রতীক। আবার মধ্যযুগের ইউরোপে অনেক সম্প্রদায় রোগ বা অশুভ আত্মা তাড়াতে ডিম ব্যবহার করত।

ভারতীয় উপমহাদেশেও লোকজ চিকিৎসায় ডিমের ব্যবহার ছিল সাধারণ। গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করত—ডিম দিয়ে শরীরের খারাপ শক্তি বা অসুখ দূর করা সম্ভব।

 

আধুনিক বিজ্ঞান কী বলে?

বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট বলেছেন—ডিম থেরাপি কোনো বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নয়।
ডিম ঘুরিয়ে অসুখ সারানো বা ডিম ভেঙে রোগ নির্ণয়ের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বরং, কাঁচা ডিম ব্যবহারের ফলে স্যালমোনেলা জাতীয় জীবাণুর ঝুঁকি বাড়ে, যা শিশু ও বয়স্কদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

তবে ডিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। এটি প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলের সমৃদ্ধ উৎস। নিয়মিত ডিম খেলে শরীর ভালো থাকে। চুল বা ত্বকের যত্নে ডিমের ব্যবহারও উপকারী, কিন্তু এসব ‘থেরাপি’ নয়—এগুলো পুষ্টি ও সৌন্দর্যচর্চার অংশ মাত্র।

 

কুসংস্কার, না সংস্কৃতির অংশ?

যে কোনো সমাজের বিশ্বাসে লুকিয়ে থাকে ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতিফলন। ডিম থেরাপিও তার ব্যতিক্রম নয়। যদিও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এটিকে স্বীকৃতি দেয় না, তবুও এই প্রাচীন লোকাচার আজও মানুষের ভরসা জাগায়।

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, এ ধরনের প্রথা শারীরিক চিকিৎসা না হলেও মানসিক স্বস্তি দেয়। অসুস্থ অবস্থায় এমন রীতি মানসিক ভরসা তৈরি করে, যা রোগীর মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে।

 

ডিম থেরাপি বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নয়, এটা সত্যি। কিন্তু এটি লোকবিশ্বাস, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের এক জীবন্ত অংশ।
হয়তো আজ এটি চিকিৎসার বিকল্প নয়, তবে মানুষের বিশ্বাস ও মানসিক প্রশান্তির প্রতীক হিসেবে এর স্থান এখনো অটুট।

Tags

ডিম-থেরাপি চিকিৎসা সংস্কৃতি-ইতিহাস
Popular post
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে চাকরির সুযোগ, বেতন ৪৫ হাজার

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (BDRCS) নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট অফিসার পদে জনবল নিয়োগ দেবে। আগ্রহী প্রার্থীরা আগামী ১৬ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।   এক নজরে নিয়োগের বিস্তারিত   প্রতিষ্ঠানের নাম: বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (BDRCS) বিভাগের নাম: অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন পদের নাম: অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট অফিসার পদসংখ্যা: ০১ জন শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্নাতক বা সমমান অভিজ্ঞতা: ন্যূনতম ১ বছর চাকরির ধরন: চুক্তিভিত্তিক প্রার্থীর ধরন: নারী-পুরুষ উভয় বয়সসীমা: নির্ধারিত নয় বেতন: ৪৫,০০০ টাকা কর্মস্থল: ঢাকা   আবেদন প্রক্রিয়া: আগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে ও আবেদন করতে এখানে ক্লিক করুন। আবেদনের শেষ তারিখ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫

৫০ হাজার টাকা বেতনে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে চাকরির সুযোগ

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে ‘টেকনিক্যাল অফিসার’ পদে নিয়োগ   দেশের অন্যতম মানবিক সংগঠন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রকল্প কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘টেকনিক্যাল অফিসার’ পদে একজন যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দেবে। আগ্রহীরা ২১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।   পদসংক্রান্ত তথ্য   প্রতিষ্ঠানের নাম: বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পদের নাম: টেকনিক্যাল অফিসার পদসংখ্যা: ১ জন   যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা শিক্ষাগত যোগ্যতা: বিএসসি বা ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অভিজ্ঞতা: ন্যূনতম ২ বছর বয়সসীমা: সর্বোচ্চ ৪০ বছর   বেতন ও চাকরির ধরন বেতন: ৫০,০০০ টাকা চাকরির ধরন: চুক্তিভিত্তিক প্রার্থীর ধরন: নারী-পুরুষ উভয়ই আবেদন করতে পারবেন কর্মস্থল: কুড়িগ্রাম   আবেদন প্রক্রিয়া   আগ্রহীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে ও আবেদন করতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ওয়েবসাইটে ক্লিক করুন।

কৃষি ব্যাংকে চাকরি, নেবে ৩৯৮ জন

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির তত্ত্বাবধানে নতুন সমন্বিত ব্যাংক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এই নিয়োগের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক-এ সিনিয়র অফিসার (সাধারণ) পদে ৩৯৮ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে।   পদসংক্রান্ত তথ্য   প্রতিষ্ঠানের নাম: বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক পদের নাম: সিনিয়র অফিসার (সাধারণ) পদসংখ্যা: ৩৯৮টি   শিক্ষাগত যোগ্যতা   প্রার্থীদের যেকোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা চার বছর মেয়াদি স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি থাকতে হবে। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) বা সমমানসহ তদূর্ধ্ব পর্যায়ের পরীক্ষাগুলোর মধ্যে অন্তত দুইটিতে প্রথম বিভাগ/শ্রেণি থাকতে হবে। কোনো পর্যায়েই তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণি গ্রহণযোগ্য নয়।   বয়সসীমা   ১ জুলাই ২০২৫ তারিখে প্রার্থীর বয়স সর্বনিম্ন ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩২ বছর হতে হবে।   আবেদন সংক্রান্ত তথ্য   আবেদন ফি: ২০০ টাকা (অনগ্রসর নাগরিক গোষ্ঠীর প্রার্থীদের জন্য ৫০ টাকা)। আবেদনের শেষ সময়: ১০ নভেম্বর ২০২৫।   আবেদন পদ্ধতি   আগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে এবং আবেদন করতে এখানে ক্লিক করুন।

৯২ হাজার টাকা বেতনে চাকরির সুযোগ

আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটারএইড বাংলাদেশ জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ‘টেকনিক্যাল এক্সপার্ট’ পদে নতুন কর্মী নেবে। আগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনের মাধ্যমে ২৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।   নিয়োগের বিস্তারিত প্রতিষ্ঠানের নাম: ওয়াটারএইড বাংলাদেশ পদের নাম: টেকনিক্যাল এক্সপার্ট পদের সংখ্যা: নির্ধারিত নয় চাকরির ধরন: ফুল টাইম প্রার্থীর ধরন: নারী-পুরুষ উভয়ই কর্মস্থল: খুলনা   যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা শিক্ষাগত যোগ্যতা: বিএসসি বা স্নাতক (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং/এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে) অভিজ্ঞতা: সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ বছর বয়সসীমা: নির্ধারিত নয় বেতন ও সুবিধা বেতন: প্রতি মাসে ৯২,৫০০ টাকা   আবেদন প্রক্রিয়া আগ্রহী প্রার্থীরা এখানে ক্লিক করে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের শেষ তারিখ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫

জানা গেল সেই আনিসার ফলাফল

মায়ের অসুস্থতার কারণে কেন্দ্রে দেরিতে আসায় পরীক্ষা না দিতে পারা সেই আনিসা আহমেদ এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছেন। তিনি বাংলা ও ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে ফেল করেন।   আনিসা ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি মানবিক বিভাগের পরীক্ষাথী।   বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।   এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিনই (২৬ জুন) ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষার্থী আনিসা মায়ের অসুস্থতার কারণে সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছুতে পারেননি। দেরি হওয়ায় তাকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেননি দায়িত্বরতরা। এসময় ওই ছাত্রী পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গেটের বাইরে দীর্ঘসময় অপেক্ষায় থেকে তিনি সেদিন ফিরে যান। ওই ছাত্রীর পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল রাজধানীর সরকারি মিরপুর বাঙলা কলেজ।   আনিসার কান্না-আকুতি তখন নাড়িয়ে দেন বহু মানুষের বিবেক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠে—আইন কি মানবিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে? নেটিজেনরা দাবি তোলেন—মানবিক বিবেচনায় হলেও তাকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।   অন্তর্বর্তী সরকারও সেই দাবি আমলে নেয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে তখন শিক্ষা উপদেষ্টার বরাতে জানানো হয়, ‘পরীক্ষা দিতে না পারা আনিসার বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।’

ফিচার

View more
‘ডিম থেরাপি’ নামে কি সত্যি কিছু আছে?
‘ডিম থেরাপি’ নামে কি সত্যি কিছু আছে?

ডিম থেরাপি: রোগ সারায়, নাকি কেবল কুসংস্কার? মানুষের জীবনে রোগ, কষ্ট কিংবা দুর্ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করার ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। যখন আধুনিক চিকিৎসা ছিল না, তখন মানুষ ভরসা রাখত প্রকৃতির উপাদান, আচার-অনুষ্ঠান ও বিশ্বাসের ওপর। এই বিশ্বাসের ভাণ্ডারে ডিমও জায়গা করে নেয়—যার ওপর গড়ে ওঠে রহস্যময় এক প্রথা, ‘ডিম থেরাপি’।   কিন্তু প্রশ্ন হলো—আসলেই কি ডিম দিয়ে রোগ সারে? নাকি এটি কেবল লোকবিশ্বাসের অংশ?   লোকজ বিশ্বাসে ডিম থেরাপির ব্যবহার বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বহু গ্রামাঞ্চলে এখনো দেখা যায়—কোনো শিশু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা ‘নজর’ লেগেছে মনে হলে তার মাথার চারপাশে কাঁচা ডিম ঘুরিয়ে পরে ভেঙে দেখা হয়। বিশ্বাস করা হয়, খারাপ শক্তি বা দৃষ্টিদোষ ডিমের ভেতরে চলে যায়। শুধু আমাদের দেশেই নয়—মেক্সিকো, পেরু, কিউবা ও ফিলিপাইনের মতো লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতেও এই প্রথা প্রচলিত। সেখানে ‘লিম্পিয়া (Limpia)’ নামে পরিচিত এক আচার রয়েছে, যেখানে কাঁচা ডিম দিয়ে শরীর মুছে পরে সেটি পানিতে ভেঙে রাখা হয়। ডিমের ভেতরের আকৃতি দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়—কোথায় সমস্যা, কার কারণে অসুস্থতা ইত্যাদি।   অনেক সংস্কৃতিতে ডিমকে “জীবনের প্রতীক” ধরা হয়। তাই ডিম দিয়ে শরীর শুদ্ধ করা মানে নেগেটিভ এনার্জি দূর করা—এমনটাই বিশ্বাস।   ইতিহাসে ডিম থেরাপির অবস্থান ডিমকে ঘিরে নানা বিশ্বাসের ইতিহাস বহু পুরোনো। প্রাচীন মিশর ও গ্রিসে ডিম ছিল উর্বরতা ও নতুন জীবনের প্রতীক। আবার মধ্যযুগের ইউরোপে অনেক সম্প্রদায় রোগ বা অশুভ আত্মা তাড়াতে ডিম ব্যবহার করত। ভারতীয় উপমহাদেশেও লোকজ চিকিৎসায় ডিমের ব্যবহার ছিল সাধারণ। গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করত—ডিম দিয়ে শরীরের খারাপ শক্তি বা অসুখ দূর করা সম্ভব।   আধুনিক বিজ্ঞান কী বলে? বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট বলেছেন—ডিম থেরাপি কোনো বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নয়। ডিম ঘুরিয়ে অসুখ সারানো বা ডিম ভেঙে রোগ নির্ণয়ের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বরং, কাঁচা ডিম ব্যবহারের ফলে স্যালমোনেলা জাতীয় জীবাণুর ঝুঁকি বাড়ে, যা শিশু ও বয়স্কদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে ডিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। এটি প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলের সমৃদ্ধ উৎস। নিয়মিত ডিম খেলে শরীর ভালো থাকে। চুল বা ত্বকের যত্নে ডিমের ব্যবহারও উপকারী, কিন্তু এসব ‘থেরাপি’ নয়—এগুলো পুষ্টি ও সৌন্দর্যচর্চার অংশ মাত্র।   কুসংস্কার, না সংস্কৃতির অংশ? যে কোনো সমাজের বিশ্বাসে লুকিয়ে থাকে ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতিফলন। ডিম থেরাপিও তার ব্যতিক্রম নয়। যদিও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এটিকে স্বীকৃতি দেয় না, তবুও এই প্রাচীন লোকাচার আজও মানুষের ভরসা জাগায়। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, এ ধরনের প্রথা শারীরিক চিকিৎসা না হলেও মানসিক স্বস্তি দেয়। অসুস্থ অবস্থায় এমন রীতি মানসিক ভরসা তৈরি করে, যা রোগীর মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে।   ডিম থেরাপি বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নয়, এটা সত্যি। কিন্তু এটি লোকবিশ্বাস, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের এক জীবন্ত অংশ। হয়তো আজ এটি চিকিৎসার বিকল্প নয়, তবে মানুষের বিশ্বাস ও মানসিক প্রশান্তির প্রতীক হিসেবে এর স্থান এখনো অটুট।

অক্টোবর ১৪, ২০২৫ 0
ইতিহাসের হারানো শহরগুলো

ইতিহাসের হারানো শহরগুলো: হাজার বছর পরও যেগুলোর রহস্য উন্মোচন হয়নি!